সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সুন্নতি সামগ্রীর অনুকরণে কিছু সুন্নতি সামগ্রীর ছবি (সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেদিন, যদি তারা আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করতে চায় তাহলে তারা যেনো আপনার অনুসরণ করে, তাহলে আমি আল্লাহ পাক স্বয়ং তাদেরকে মুহব্বত করবো, তাদেরকে ক্ষমা করবো, তাদের প্রতি দয়ালু হবো; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা আল ইমরান ৩১)

সুন্নতের ফযীলত সম্পর্কে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলো। আর যে আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযী শরীফ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আখিরী যামানায় যে ব্যক্তি একটি সুন্নত আঁকড়ে ধরে থাকবে তথা আমল করবে তাকে এর বিনিময়ে একশত শহীদ এর ছওয়াব প্রদান করা হবে।

সুন্নতি পাগড়ি মুবারক:

b1cd9d12d66537a02ca15f22b7e94a47_xlarge

পাগড়ীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। তিনি ঘরেও পাগড়ী মোবারক পরিধান করতেন। মক্কা শরীফ বিজয়ের সময়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মোবারক-এ কাল পাগড়ী মোবারক ছিল। উনার পাগড়ী মুবারক-এর নিচে এবং পাগড়ী মুবারক ব্যতীত শুধু টুপিও ব্যবহার করেছেন। Read the rest of this entry

যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

jatara bareee

কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীকত মাহিউল বিদয়াহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, মুজাদ্দিদুয যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, তাজুল মুফাসসিরীন, সুলতানুল আরিফীন, আলহাজ্জ হযরত মাওলানা শাহ ছুফী আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপূরী যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১৩৫২ হিজরী সন মুতাবিক ১৩০১ শামসী (১৯৩৪ ঈসায়ী) চাঁদপুর জেলার (বৃহত্তর কুমিল্লা) অন্তর্গত নানুপুর গ্রামে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম শাহছূফী হযরত আহমদ উল্লাহ মুনশী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সম্মানিত মাতা উনার নাম মুছাম্মাত আয়িশা খাতুন রহমতুল্লাহি আলাইহা। সম্মানিত মাতা পিতা উনারা উভয়ে অত্যন্ত পরহিজগার ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বয়স যখন ৬/৭ বৎসর তখন উনার সম্মানিত আব্বাজান তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন। সম্মানিত পিতা উনার বিছাল শরীফ উনার সময় উনারা সাত ভাই ও এক বোন ছিলেন। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে ষষ্ঠ অর্থাৎ উনার বড় আরো পাঁচ ভাই এবং উনার ছোট এক ভাই ছিলেন।

পবিত্র ইলম অর্জন

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি ১৯৮২ ঈসায়ী সনের ৫ই নভেম্বর, রোজ জুমুয়াবার মাগরিব নামায উনার পরে পবিত্র হুজরা শরীফে তিনি উনার পবিত্র শৈশব কাল স¤পর্কে আলোচনাকালে বলেন: “আমার অতি অল্প বয়সে সম্মানিত আব্বাজান তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আমার বড় ভাই উনার ইচ্ছা ছিল আমি যেন ইংরেজী পড়ি। কিন্তু ইংরেজী পড়ার প্রতি আমার কোন আগ্রহই হলো না। আমি মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হই।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর তিনি স্থানীয় মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং সব সময় কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। তিনি ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে তাফসীর বিভাগ ও ফিকাহ বিভাগে কামিল পরীক্ষায় (মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী) প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন (অর্থাৎ ডাবল টাইটেল পাশ করেন)। তিনি ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার রিসার্চ স্কলারও ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদ্রাসা আলীয়াতে তাফসীরের অধ্যাপনা করতে থাকেন। সুদীর্ঘ ২৭ বৎসর মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করার পর অবসর প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি মসজিদে ইমামতি করেন। সর্বমোট ২৩ বৎসর ৬ মাস সময় তিনি মসজিদে ইমামতি করেছেন। তবে শেষের দিকে গেন্ডারিয়া/সুত্রাপুর লোহারপুল (ঢাকা) মসজিদে ইমামতি করেন।

পবিত্র ইলমে তাছাওউফ অর্জন

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর ফুরফুরা শরীফের মাদারজাদ ওলী, সুলাতানুল আরেফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছুফী নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ন’হুযূর ক্বিবলা) উনার মুবারক হাতে মুরীদ হয়ে তরীক্বতের সবক্ব মশক্ব করতে থাকেন। বর্ণিত আছে যে, মুরীদ হওয়ার পূর্বে হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার লোহারপুল মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তখন উক্ত মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতীব। উনার পেছনে নামায পড়ে হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি গেন্ডারিয়াতে উনার আবাসস্থলে ফিরে গিয়ে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট সংবাদ পাঠান যে, হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আপনাকে ডেকেছেন। তিনি হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হলে কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর উনার মুবারক হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। বাইয়াত হওয়ার পর থেকে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিদমতে নিজকে নিয়োজিত করেন এবং কঠোর রিয়াজত মাশাক্কাত সহকারে তরীকতের শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। দীর্ঘদিন পর হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে সম্মানিত খিলাফত মুুবারক প্রদান করেন। ফুরফুরা শরীফের তৎকালীন গদীনশীন পীর, কাইয়ূমে যামান, হযরত মাওলানা শাহ ছুফী মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনাকে সম্মানিত খিলাফত মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!

তা’লীম তরবিয়ত

প্রথম দিকে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খানকাহ শরীফ ছিলেন লোহারপুল মসজিদের দোতালায়। এখানে মসজিদের একটি খাম্বা (পিলার)-এর সঙ্গে হেলান দিয়ে তিনি মুরীদগণকে পবিত্র তা’লীম তালকীন দিতেন। এই খাম্বার নিকটে উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বসেছিলেন। প্রতি ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার আছর নামায উনার পর থেকে যিকিরের হালকা শুরু হতো। সে সময় অফিস আদালত ইয়াওমুল আহাদ বা রোববারে ছুটি থাকত, সেজন্য ইয়াওমুল আহাদ বা রোববারে যিকিরের সাপ্তাহিক জলসার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। মাগরিব নামায উনার পর থেকে ইশা পর্যন্ত যিকির-আযকার হতো। যিকির শেষে মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি কিছু ওয়াজ নছীহত করতেন। উনার ওয়াজ নছীহতে মানুষের মন বিগলিত হয়ে যেত। অনেক সময় মছনবী শরীফ হতে ও শেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ফার্সি শের-আশয়ার অত্যন্ত মুহব্বতের সাথে পাঠ করতেন। যিকিরের মজলিসে মুরীদগণের কেউ কেউ ‘ওয়াজদ’ (আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা-হীনতা)-এর হাল হয়ে যেত।
লোহার পুল মসজিদের অনতিদূরে (মসজিদের দক্ষিন-পশ্চিম পার্শে) একটি বাড়ীতে তিনি স্বপরিবারে অবস্থান মুবারক করতেন। বর্ষার দিনে বাড়ীর রাস্তায় পানি উঠে যেত। প্রবল বর্ষায় মসজিদ থেকে বাড়ী পর্যন্ত যেতে হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে যেতে হত। উক্ত ঘরে দু’টি কামরা ছিল। একটি কামরায় একটি বড় চৌকি ছিল, যা কামরাটির অধিকাংশ স্থান দখল করে রেখেছিল। নীচে বসার বিশেষ জায়গা ছিল না। শুধু চলাচল করার মত জায়গা ছিল। এই কামরাটি “হুজরা শরীফ” হিসাবে ব্যবহƒত হত। মুরীদান বা মেহমান কেউ গেলে এখানেই বসতেন। কেউ বাইয়াত হওয়ার জন্য গেলে এখানে এই চৌকির উপর বসেই বাইয়াত গ্রহণ করতেন। মেহমানদের খাবার পরিবেশনও করা হত। পার্শবর্তী অপর কামরাটিতে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া ও আওলাদগণ উনারা থাকতেন। উক্ত কামরার প্রবেশদ্বারে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হতো। এই বাড়ীটির সামনে প্রশস্ত উঠান ছিল। কোন কোন মুরীদান হাদীয়া হিসাবে মোরগ নিয়ে আসতেন। মাঝে মাঝে দু’একটি মোরগ বাড়ীতে পালন করা হতো।

ফানা ফিশশায়েখ

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুহব্বতে প্রায়ই গরক্ব থাকতেন। তিনি সত্যিকারের ফানা ফিশ-শায়খ ছিলেন। যিকিরের মজলিসে মাঝে মাঝে এই শে’রটি অত্যন্ত আশিক্ব হয়ে সুললতি কন্ঠে আওড়াতে থাকতেন:-
“আয় মুরশিদে তরীক্বত, এক রং সে রাঙ্গা দে,
যিস্ রং সে তু রাঙ্গা হ্যায়, উস রং সে রাঙ্গা দে।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শেষ জীবনে যখন অসুস্থ হয়ে যান, তখন উনার আরোগ্যের জন্য যিকিরের মজলিসে খত্মে শিফা এবং খত্মে খাজেগান পড়াতেন। এই খতমের সময় ছিল আছর থেকে মাগরিবের পুর্ব পর্যন্ত। খতমের জন্য অনেকগুলি তেতুলের বীচি রাখা হত। যাকিরীনদের যে কেউ আছর থেকে মাগরিবের পূর্বে আসত, এই খতম পড়ায় শামিল হয়ে যেত। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ইশা উনার নামাযের আযানের মুনাজাতে হাত তুলে দোয়া করতেন। আযানের দোয়া (বিস্তৃতভাবে) উক্ত মুনাজাতে আদায় করে একসঙ্গে ছওয়াব রেসানীর মুনাজাত শেষ করতেন।

স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছানা ছিফত

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার অনেক ছানা ছিফত করতেন। তিনি বলেন: প্রত্যেক লোকের কথা বলার একটি নিয়ম আছে। আমার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যখন “আল্লাহ” নাম উচ্চারণ করতেন, তিন বলতেন মহান আল্লাহ পাক। তিনি উনার কথাবার্তায় শুধু ‘আল্লাহ’ না বলে, বলতেন ‘আল্লাহ-পাক’। সেই নিয়ম আমিও মেনে চলি। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: আমার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন মাদারজাদ ওলী। তিনি প্রথম জীবনে অত্যন্ত জালালী তবীয়তের ছিলেন। সচরাচর লোক উনার নিকটে ভয়ে আসত না। যদি কারো আচার আচরণে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন, তৎক্ষণাৎ তার ক্ষতি হয়ে যেত। আমি উনার মুরীদ হওয়ার পর দেখতে পেলাম তিনি ইলমে মারিফাতের এক বিরাট সমুদ্র, এত সব নিয়ামত নিয়ে বসে আছেন, অথচ লোক উনার জালালিয়তের কারণে যথোপযুক্তভাবে উপকৃত হতে পারছে না, আমি উনার নিকট আর্জি পেশ করলাম তিনি যেন এই জালালী ভাব জামালী ভাবে রূপান্তরিত করেন। অতঃপর তিনি জামালী ভাব ধারণ করেন। এরপর লোকজন উনার মুরীদ হয়ে উনার ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ন’‎হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাড়ীতে অবস্থান কালে (এ বাড়ীতে তিনি দীর্ঘদিন বসবাস করেছিলেন। পরে এ বাড়ীতে উনার ছাহেবজাদা হুজ্জাতুল্লাহ ছাহেবকে রেখে তিনি ফুরফুরা শরীফ চলে যান।) সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত করতেন এবং সব সময় উনার নিকটে বসাতেন। এটা দেখে উনার অনেক পুরাতন মুরীদ উনাকে ঈর্ষা করতেন।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা, হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জালালীয়ত স¤পর্কে বলেন: একবার কোন এক মজলিসে মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বসা ছিলেন। এ সময় একটি জ্বীন আকাশ পথে উনাদের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা লক্ষ্য করেও কিছু বললেন না। হযরত ন’হুযূর ক্বিলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নজরে আসা মাত্র তিনি উক্ত জ্বীনের প্রতি জালালী নজরে দৃষ্টিপাত করেন। অমনি জ্বীনটি পুড়ে ছাই হয়ে উনাদের দু’জনের সম্মুখে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উক্ত জ্বীনের আত্মীয় স্বজনও এসে যায়। উক্ত জ্বীনের আত্মীয় স্বজন মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এ কাজের বিচার প্রার্থনা করল। মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন: বাবা, তুমি এ কি করলে? আমি তো উক্ত জ্বীনটিকে দেখেছিলাম, কিন্তু আমি তো কিছু বলিনি। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন: সে এত বড় বেয়াদব যে, মুজাদ্দিদে যামান বসে আছেন, আশে পাশে সে আর জায়গা পেল না, ঠিক উনার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যেতে সাহস করল। এজন্য আমি তাকে শাস্তি দিয়েছি। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত জ্বীনের আত্মীয় স্বজনকে বললেন: জলদি দূর হও, নতুবা তোমাদেরকেও আমি শেষ করব। অতঃপর মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি উপস্থিত জ্বীনদেরকে সান্ত¦না দিয়ে বিদায় করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: প্রথম প্রথম আমার নিজেরও জালালী হাল ছিল। কারো স¤পর্কে মনে একটু কিছু আসলে তার ক্ষতি হয়ে যেত। লোহারপুল মসজিদে একবার একটা লোক আমার সঙ্গে কর্কশ ব্যবহার করল। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই লোকটা কেন অকারণে আমার সঙ্গে কর্কশ ব্যবহার করল। কয়েকদিন পর দেখা গেল, লোকটি পাগল হয়ে গেছে, আর সুস্থ হয়নি। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার এই হাল পরিবর্তন করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাশফ ও কারামত স¤পর্কে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: একবার হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিছু মুরিদ নিয়ে কোন এক কবরস্থানের নিকট দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, কবর থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে দেখে তিনি কাশফুল কুবুর মোরাকাবায় বসেন। সেখানে তিনি লক্ষ্য করেন, একটি কবরে আযাব হচ্ছে। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আবেদন করতে থাকেন, যেন উক্ত লোকটিকে আযাব থেকে মুক্তি দেয়া হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ইলহাম হলো, সে তো শিরক করেছে। তিনি তারপরও আবেদন করতে থাকেন: আয় মহান আল্লাহ পাক ! আপনি তো রহমান রহীম, শিরক করলেও তো আপনি তাকে ক্ষমা করতে পারেন। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এরূপ সংকল্প নিয়েছিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটাকে আযাব থেকে মুক্তি দেয়া না হবে, তিনি মুনাজাতের হাত নামাবেন না। অনেকক্ষণ পরে ইলহাম হলো: আপনার খাতিরে তাকে আযাব থেকে মুক্তি দিলাম। এদিকে উপস্থিত লোকজন দেখতে পেলেন, হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুনাজাতে হাত মুবারক সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত উপরে তুলে আছেন, আর উনার সমস্ত শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে অনবরত ঘাম ঝরছে। কারো সঙ্গে তিনি কোন কথাও বলছেন না। মুরিদগণ অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। এ সময় তিনি মুনাজাত শেষ করে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন: ঢাকার হাইকোর্টের পাশে তিন নেতার যিয়ারত করতে গেলাম। এই তিন নেতা হচ্ছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দীন। দেখতে পেলাম এ,কে, ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দীনের অবস্থা ভাল। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী আটকা পড়ে গেছে। মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অনেক আবেদন নিবেদন করে তাকে ছাড়িয়ে নিলাম। কাথিত আছে যে,সোহরাওয়ার্দী উনার দূর স¤পর্কীয় আত্মীয় হতেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: প্রথম জীবনে হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খুব পান খেতেন। মুযাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে এত পান খেতে নিষেধ করেন। অতঃপর তিনি পান খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর পূণরায় পান খাওয়া শুরু করেন। মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনি পান খাওয়া বন্ধ করলেন কেন? আমি আপনার নিষেধের কথা বললাম। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন: আপনি পান খান, বন্ধ করবেন না। অতঃপর তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনাকে বলেন: এখন আমি কোনটা মানব? মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন: ঠিক আছে, বাবা, আপনি পান খান। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বড় বড় খলীফাদের উপস্থিতিতে একবার বললেন: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যে নিয়ামত মুবারক দিয়েছিলেন, তা থেকে আমি মাত্র চার আনা দিয়ে যেতে পারলাম, বাকী বার আনা নিয়ে বোধ হয় আমাকে কবরে যেতে হবে। কারণ উপযুক্ত লোক পেলাম না এসব নিয়ামত মুবারক দেয়ার মত। সে মজলিসে হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ছিলেন। তিনি তখন অল্প বয়স্ক। শুনে তিনি খুব দুঃখিত হলেন। তিনি মনে মনে আক্ষেপ করে বললেন: আমরা অনুপযুক্ত হওয়ার কারণেই তো তিনি নিয়ামত মুবারক অর্পন করে যেতে পারছেন না। আচ্ছা ঠিক আছে, এখন দেখা যাক কি ভাবে উপযুক্ত হওয়া যায়। অতঃপর তিনি জঙ্গলে চলে গেলেন। উনার সম্মানিত আম্মাজান তিনি চিন্তা করতে লাগলেন, ছেলেটির কি হল, কোথায় গেল। কিন্তু মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি উনার মনে কোন চিন্তা নেই। তিনি বলেন: আামার ছেলে জীবিত, সে আমার থেকে ফয়েজ নিচ্ছে, তা আমি টের পাচ্ছি। তোমরা তার জন্য কেউ চিন্তিত হয়ো না। দীর্ঘ দিন পরে তিনি জঙ্গল থেকে ফিরে আসলেন। কিন্তু বাড়ীতে এসে এক স্থানে আত্মগোপন করে রইলেন। মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুয়ে ছিলেন। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লুকিয়ে থেকে উনার পবিত্র পা মুবারক উনার উপর ইত্তেহাদী ফয়েজ ছাড়লেন। মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি টের পেয়ে গেলেন এবং বললেন: কার সাহস আমার পায়ের উপর ফয়েজ ছাড়ার? তোমরা দেখ তো ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি এসেছে কিনা? সবাই খুঁজে উনাকে বের করল। তখন উনার চূল, নখ বড় হয়ে গেছে। অতঃপর উনাকে নখ, চূল কেটে নতুন কাপড় পরিয়ে প্রকৃতিস্থ করা হলো। এর পর থেকে হযরত ন’ হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানিত পিতা ও মুর্শিদ, হযরত মুজাদ্দিদে যামান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে ছায়ার ন্যায় থাকতেন। সুবহানাল্লাহ!

মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমত মুবারক

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে অতিশয় মুহব্বত করতেন। এমনকি উনার ছাহেবযাদাদেরকেও যথেষ্ট তা’জীম তাকরীম করতেন। হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বড় ছাহেবযাদা হযরত বাকী বিল্লাহ ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইিিহ উনার সাথে উনার খুব বেশী আন্তরিকতা ছিল। একবার হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুপস্থিতিতে হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছুটা আর্থিক অসুবিধায় ছিলেন। তখন উনার ঢাকা মাদ্রাসা আলীয়ায় পরীক্ষার ফীশ দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তখন দু’টি দোকান ছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ দোকান দু’টি বিক্রয় করে উনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছাহেবযাদা উনার ফীশের টাকা দিয়ে দেন। পরবর্তীতে হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফুরফুরা শরীফ চলে যান। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার শেষ জীবনে হযরত বাকী বিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার ফুরফুরা শরীফ থেকে ঢাকা এসেছিলেন, তখন যাত্রাবাড়ীর খানকা শরীফে এসে খানকাহ শরীফ সংলগ্ন মসজিদে ওয়াজ নছীহত করেছিলেন।
হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খুলাফা ও মুরীদানদের মধ্যে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন বাংলাদেশে প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ খলীফা। যখন উনার সুনাম চতুর্দ্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং চতুর্দিক থেকে আলিম ফাজিল, ইংরেজী শিক্ষিত অসংখ্য লোক উনার মুরীদ হতে লাগলেন তখন উনার অনেক পীরভাই উনাকে ঈর্ষার চোখে দেখতে লাগলেন। এজন্য সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন: তারা কেন আমাকে ঈর্ষা করে আমি জানি না। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান তাকে দেন, সকলকে দেন না। তিনি প্রায়ই বলতেন: আল্লাহ পাক জিসকো চাহতা, ছপ্পর ফাড়কে দেতা। তিনি শোকরিয়া স্বরূপ বলতেন, আমি আমার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার থেকে যেসব নিয়ামত মুবারক লাভ করেছি, তা গণনা ও হিসাব করে শেষ করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!

দু’জন থেকে খিলাফত লাভ

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে বড় হুযূর ক্বিবলা অর্থাৎ ফুরফুরা শরীফের তৎকালীন গদীনশীন পীর, কাইয়ূমে যামান, হযরত মাওলানা আবদুল হাই ছিদ্দিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সম্মানিত খিলাফত মুবারক দিয়েছিলেন। তবে উনার প্রধান মুর্শিদ ক্বিবলা ছিলেন হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সেজন্যই পবিত্র শাজরা শরীফে উনার মুর্শিদ ক্বিবলা দু’জন দেখানো হয়েছে। হযরত বড় হুযূর ক্বিবলা তিনিও উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত করতেন। হযরত বড় হুযূর ক্বিবলা তিনি ঢাকা মিরপুর দারুস সালামে যখন ওয়াজ মাহফিল করতেন, তখন নামাযের ইমামতি সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে করতে হত। একবার মাহফিলে পবিত্র ইশা উনার নামাযের সময় নামাযের প্রস্তুতি নেয়া হলো। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম কোন কারণে সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন না। হযরত বড় হুযূর ক্বিবলা তিনি বললেন: মাওলানা ওয়াজীহুল্লাহ ছাহেব কোথায়? লোকেরা বলল: তিনি মাহফিলে নেই। তখন হযরত বড় হুযূর ক্বিবলা তিনি বললেন: মাওলানা ওয়াজীহুল্লাহ ছাহেব উনাকে খোঁজ করা হোক। তিনি যেখানে আছেন সেখান থেকে আনতে হবে। তিনিই নামায পড়াবেন। তিনি বলেছিলেন: মাওলানা ওয়াজীহুল্লাহ নামায না পড়ালে আমি মনে শান্তি পাই না। অতঃপর জামায়াত স্থগিত রাখা হলো। গেন্ডারিয়া লোহারপুল গিয়ে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে বাসা থেকে নিয়ে আসা হলো। তিনি এসে নামায পড়ালেন। সুবহানাল্লাহ!

জ্বিনদের বাইয়াত গ্রহণ

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, লোহার পুল থাকতে একবার ১৬/১৭ জন জ্বীন আমার নিকট মুরীদ হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

বিশেষ বিশেষ দিবস পালন

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার তারিখে (এগারই শরীফ), হযরত খাজা আজমীরি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার তারিখে, পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র শবে মি’রাজ ইত্যাদি উপলক্ষ্যে বিশেষ মাহফিল আয়াজোন করতেন। এই সব অনুষ্ঠানের তারিখে প্রায়ই সারারাত যিকির আযকার, ওয়াজ নছীহত চলত। লোহার পুল মসজিদে একবার এইরূপ এক মাহফিল (খুব সম্ভব এগারোই শরীফের মাহফিল ছিল) সাইয়্যেদ ফজলে হাসান নামে এক অল্প বয়স্ক মুরীদ মাইকের সামনে যাওয়ার জন্য হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন কিন্তু ওয়াজ হচ্ছিল না, যিকির আযকার চলছিল। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি অনুমতি দিলেন। সাইয়্যিদ ফজলে হাসান (উনার বয়স তখন ১৫/১৬ বছর হতে পারে) মাইকের সামনে গিয়ে সবাইকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন: এইমাত্র হযরত বড় পীর হযরত গাওছে পাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে জানালেন, “তোমার মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি মুজাদ্দিদে যামান। এই কথা মাইকের মাধ্যমে সবার মধ্যে ঘোষণা করে দাও।” যেহেতু আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেজন্য আমি মাইকের সামনে এসে তা ঘোষণা করলাম। সুবহানাল্লাহ!

দুয়া মুনাজাত

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছওয়াব রেসানীর মুনাজাত অত্যন্ত হƒদয়-গ্রাহী ছিল। ছওয়াব রেসানীর যে নিয়ম পদ্ধতি ফুরফুরা শরীফের সিলসিলায় চালু ছিল, তাই তিনি এক নূতন দৃষ্টিভঙ্গীতে উপস্থাপন করেছিলেন। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তফসীরে মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী হাছিল করেছিলেন। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আলোকে ছওয়াব রেসানীর বিশেষ ফায়দা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিম্নে উনার অভিমত প্রদত্ত হলো:-
“মহান আল্লাহ পাক তিনি ছদক্বা বা দান-খয়রাত প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ৩য় পারার পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ উনার ২৬১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَهُمْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِىْ كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِئَةُ حَبَّةٍ وَ اللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاءُ وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
অর্থ: যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ধন স¤পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ সেই শষ্যদানার মত যা থেকে উৎপন্ন হয় সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে একশতটি করে দানা উৎপন্ন হয় (অর্থাৎ মোট সাত শতটি হয়)। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা, এর থেকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অতি প্রশস্ত ও সর্বজ্ঞানী। সুবহানাল্লাহ!
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে দানের ফযীলত স¤পর্কে বলা হয়েছে। তফসীরকারকগণ এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ বলতে সকল প্রকারের নেক কাজকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ যে কোন নেক কাজে ধন স¤পদ দান করা বা কোন ইবাদতের ছওয়াব দান করা মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করার শামিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- নামায, রোজা, যিকরুল্লাহ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করলে তাও সাত শত গুণ বেড়ে যায়। (মসনদে ইমাম আহমদ, তফসীরে ইবনে কাছীর)
সুতরাং কেউ যদি তার জীবনের সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদি নেক কাজের ছওয়াবসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করে, তবে তার প্রতিদানও উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ মোতাবেক হবে। সুবহানাল্লাহ!
এখন যদি কেউ তার নেক আমল হতে একটি ছওয়াব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করে, তবে পূর্ব-বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী দানকারীর আমল নামায় ৭০০ গুণ অর্থাৎ ৭০০ ছওয়াব জমা হবে। আর এই প্রথম বারের ৭০০ ছওয়াব সে যদি পূণরায় দান করে, তবে দ্বিতীয় বার সে ৭০০ x ৭০০ = ৪,৯০,০০০ ছওয়াব পাবে। এভাবে বার বার দান করলে প্রতিবারে সে পূর্ব ছওয়াবের কমপক্ষে ৭০০ গুণ বেশী প্রতিদান পেতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয়বার দান করলে ৪,৯০,০০০ x ৭০০ = ৩৪,৩০,০০০০০ (চৌত্রিশ কোটি ত্রিশ লক্ষ) ছওয়াব পাবে। কেউ যদি তার জীবনের সমস্ত ছওয়াব দান করে, তবে সে প্রথমবার ৭০০ জীবনের ছওয়াব পাবে। এরূপ যতবার দান করবে, ততবারই উপরোক্ত হারে প্রতিদান পেতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
এখানে লক্ষণীয় যে, পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী এটা কমপক্ষের হিসাব। আর মহান মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা এর অপেক্ষা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি এর চেয়েও প্রশস্ত এবং সর্বজ্ঞানী। সুবহানাল্লাহ!
ফিক্বহের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কোন মানুষ তার জীবনের সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল ইবাদতের ছওয়াব অপরের নামে বখশিয়ে দিলে তা জায়িয হবে। (বাহারে শরীয়ত)
সুতরাং কেউ যদি তার জীবনের সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদি নেক কাজের ছওয়াবসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে দান করে, তবে তার প্রতিদানও উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী হবে। আর এই ছওয়াব জীবিত, মৃত সকলকেই দান করা যায়। ছওয়াব রেসানীর মাধ্যমে গুণাহগার লোকের গুণাহ মাফ হয়। বুযুর্গ লোকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। হযরত নবী রসূল ও ওলীআল্লাহ উনারা যদিও কোন ছওয়াব রেসানীর মুহতাজ নন, ছওয়াব রেসানীর ফলে উনাদের নেক নজর ও দোয়া পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত ছওয়াবের হিসাব পবিত্র কুরআন পাক উনার নির্ভরযোগ্য তফসীর ও হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদী অভিমত, যা কারো পক্ষে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সেজন্য বলতেন: কোন নেক কাজ আমি আমার নিজের জন্য রাখিনা। সব বন্টন করে আমি খালী হয়ে থাকি। উনার মুনাজাতের মাধ্যমেও মহান আল্লাহ পাক উনার দানের এই প্রশস্ততার বহি:প্রকাশ দেখা যায়। যিকিরের পর ছওয়াব রেসানীতে তিনি অনেক লম্বা মুনাজাত করতেন। তিনি এভাবে ছওয়াব রেসানীর মুনাজাত করতেন:-
“আয় মহান আল্লাহ পাক, আমরা দোয়া-দূরূদ, তসবীহ-তাহলীল, ছলাত, ছাওম ইত্যাদি যা কিছু পড়েছি এবং জীবনে যত ফরয-ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইবাদত করেছি, তাতে যা কিছু ভূল ত্রুটি হয়েছে আপনার রহমতের দ্বারা মাফ করে, এর অশেষ ছওয়াব মঞ্জুর করুন। সেই ছওয়াব সর্বপ্রথম আমাদের প্রাণের আঁকা তাজেদারে মদীনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পৌঁছে দিন। এর ছওয়াব উনার আল ও আওলাদ, আযওয়াজে মুতাহহারাত, ছাহাবায়ে কিরাম, আহলু বায়ত শরীফ, রিদওয়ানুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাইন উনাদের খিদমত মুবারকে পৌঁছে দিন।
এর ছওয়াব তামাম আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের পাক আরওয়াহ মুবারকে পৌঁছে দিন।
এর ছওয়াব তামাম ছিদ্দিক্বীন, শুহাদা, ছলেহীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইম্মায়ে মোজতাহেদীন, মুহাদ্দিছীন, মুফাসসিরীন, ফুক্বাহা উনাদের পাক আরওয়া মুবারকে পৌঁছে দিন।
এর ছওয়াব তামাম আইম্মায়ে তরীক্বত, পীরানে তরীকত, খাছ করে কাদেরীয়া, চিশ্তীয়া, নকশেবন্দীয়া, মুজাদ্দিদীয়া, ছবেরিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, বায়জেদিয়া, কলন্দরিয়া, উয়াইসিয়া, মালামাতিয়া, শাজলিয়া এবং মুহম্মদীয়া তরীক্বা উনাদের সমস্ত ইমাম ও উনাদের সকলের মুরীদীন, মু’তাক্বিদীন, মুহিব্বীন, মুতায়াল্লিক্বীন ও খুলাফা উনাদের পাক আরওয়াহ মুবারকে পৌঁছে দিন।
এর ছওয়াব সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত জ্বীন ও ইনসানের মধ্যে যত মু’মিনীন, মু’মিনাত, মুসলিমীন মুসলিমাত ইন্তেকাল করেছেন, এখন রয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আসবেন, উনাদের সকলের পাক আরওয়াহ মুবারকে এবং আমল নামায় পৌঁছে দিন।
এর ছওয়াব আমাদের সকলের পিতামাতা, ভাইবোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফু, চাচা-চাচী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, পীর-উস্তাদ, দোস্ত-আহবাব, পাড়া-প্রতিবেশী, জীবিত এবং মৃত সমস্ত মু’মিন জ্বীন-ইনসানের পাক আরওয়াহ মুবারকে পৌঁছে দিন। খাছ করে এই সমস্ত ছওয়াবের হাদিয়া আমাদের প্রাণের মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আমলনামায় পৌঁছে দিন। এর ছওয়াব উনার সমস্ত আওলাদ, আছহাব, আজওয়াজ, সমস্ত মুরীদীন, মুতাক্বিদীন, মুহিব্বীন, মুতাআল্লিক্বীন ও খুলাফা উনাদের আরওয়াহ মুবারক ও আমলনামায় পৌঁছে দিন।”
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অভিমত, সর্বশেষে যাঁর উপর ছওয়াব রেসানী হবে, উনার উপর সবচেয়ে বেশী ছওয়াব পৌঁছবে। আমরা যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি, তাই আমাদের সমস্ত জীবনের ছওয়াবগুলি উনাকে প্রথমে ও শেষে হাদিয়া পাঠাই। এর ওসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের দোয়াগুলিকেও কবূল করবেন, ইনশাআল্লাহ। ছওয়াব রেসানীর পর উনার মুনাজাত আরো অনেক লম্বা হতো, যা এখানে উল্লেখ করা হলো না।
উপরোক্ত দোয়া থেকে বুঝা যায় সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কতটুকু প্রশস্ততার সঙ্গে ছওয়াব রেসানীর দোয়া করতেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অফুরন্ত রহমতের উপর উনার কতটুকু আস্থা ছিল। সুবহানাল্লাহ!

আশিকুল্লাহ

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি প্রায়ই মহান আল্লাহ পাক উনার ইশক্ব-মুহব্বতে গরক্ব থাকতেন। অনেকক্ষণ পর পর এক নাগাড়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে “আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ” বলতেন। এর মধ্যে কোন কৃত্রিমতা ছিল না। ইহা ছিল অন্তর থেকে উৎসারিত আবেগের স্বত:স্ফূর্ত বহি:প্রকাশ। প্রায়ই নিম্নের ফার্সি শে’র সমূহ অত্যন্ত আবেগের সাথে সুন্দর সুমিষ্ট স্বরে আবৃত্তি করতেন:-
“তু জান্নাত্ রা ব নেকাঁ দে মানে বদ্রা বদোজখ-বর,
কে বছ বাশাদ মরা আঁজা তামান্নায়ে বেছালে তু।”
অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! আপনি জান্নাত আপনার নেককার বান্দাদেরকে দিয়ে দিন এবং আমি বদকারকে দোজখে দিয়ে দিন। আমার জন্য এতটুকইু যথেষ্ট যে, আমি দোজখে বসে আপনার মিলনের আকাঙ্খা করতে থাকব। সুবহানাল্লাহ!
“না উকবারা দোস্ত দারাম, না দুনিয়ারা খরিদারম,
মরা চীজে নামি বায়াদ বজুজ দীদারে ইয়া আল্লাহ।”
অর্থাৎ আমি আখেরাতকে দোস্ত রাখি না এবং দুনিয়ারও খরিদদার নই। আয় আল্লাহ পাক! আমি আপনার দীদার ব্যতীত অন্য কিছুই চাই না। সুবহানাল্লাহ!
“খুররম আঁ রোজেকে জি মনজিল বিরাঁ মিরাওয়াম,
রাহাতে জাঁ তলবম, আজ পায়ে জাঁ না মিরাওয়াম।”
অর্থাৎ আমি ঐ দিন খুশী হব, যেদিন এই বিরান দুনিয়া হতে প্রেমাস্পদ (আল্লাহ পাক)-উনার দিকে চলে যাব। সুবহানাল্লাহ!

আশিকু রসূলিল্লাহ

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী আশিক্ব ছিলেন। সুন্নতের পূর্ণ অনুসারী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত স¤পর্কে প্রায়ই ওয়াজ নছীহত করতেন। তিনি এই উর্দ্দু কবিতাটি প্রায়ই আবৃত্তি করতেন:
“সব্সে বড়া দরবার, দরবারে মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
সব্সে বড়া সরকার, সরকারে মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
ইয়ে দরবার, দরবারে মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),
ইয়ে সরকার, সরকারে মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।” সুবহানাল্লাহ!
যাত্রাবাড়ী খানকা শরীফে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হুজরা শরীফ উনার দেয়ালে উপরোক্ত পংক্তি কয়টি এখনও লিপিবদ্ধ আছে।

পবিত্র হজ্জ পালন

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি গেন্ডারিয়া-লোহারপুলে অবস্থানকালে পবিত্র হজ্ব সমাপন করেছিলেন (সম্ভবত: ১৯৭২-৭৩ ঈসায়ী সনে)। হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করে বিভিন্ন বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: “পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মসজিদে হারামে (বায়তুল্লাহ শরীফে) প্রত্যেক নেক কাজের ছওয়াব পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশী এবং পবিত্র মদীনা শরীফে মসজিদে নববী শরীফে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশী। সেই হিসাবে এ উভয় স্থানে এক রাকায়াত নফল নামায পড়লে যথাক্রমে এক লক্ষ রাকায়াত ও পঞ্চাশ হাজার রাকাত নফল নামাযের ছওয়াব হয়। ফরয নামাযের ফযীলত সকল নামাযের উপরে। সেই জন্য আমি হজ্বে গেলে এই উভয় স্থানে অন্যান্য নফল নামায অপেক্ষা উমরী ক্বাযা বেশী বেশী আদায় করেছি, যাতে এই নামায ফরযের পরিপূরক হয়।” সুবহানাল্লাহ!

দান্দান মুবারক শহীদ

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যখন পবিত্র উহুদের ময়দানে যান, ভাবাবেগে আত্মহারা হয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ সেখানে মুনাজাত করতে থাকেন। মনে মনে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজী পেশ করেন: আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব, আমাদের প্রাণের আঁকা, এই উহুদের ময়দানে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্তেরঞ্জিত হয়ে ছিলেন। উনার পবিত্র দান্দান মুবারক শহীদ হন। আমি জানিনা কোন্ দাঁত মুবারকটি উনার শহীদ হয়েছিলেন। হযরত উয়ায়েস আল করণী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আপনার হাবীব উনার মুহব্বতে উনার সমস্ত দাঁত মুবারকগুলি নিজ হাতে উপড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতে পারেননি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন্ দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন। আমি আপনার হাবীব উনার একজন দুর্বল উম্মত। আপনার মেহেরবাণী দ্বারা হয়ত আমাকে জানিয়ে দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন, নতুবা উনার যে দাঁত মুবারকটি শহীদ হয়েছিলেন, আমার সেই দাঁতটি ছিন্ন করে দিন। মুনাজাতের মধ্যে এইভাবে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করতে থাকলে, উনার মুখ মুবারক থেকে একটি কাঁচা দাঁত উনার হাতের মধ্যে পড়ে যায়। সে দাঁত মুবারকটি তিনি উহুদের ময়দানে দাফন করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

পাগড়ী মুবারক লাভ

তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পবিত্র রওজা পাক যিয়ারতে যান, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজের পবিত্র হাতে হুযূর ক্বিবলা উনার মাথায় পাগড়ী মুবারক পরিয়ে দেন। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এক আশিক্ব মুরীদ (উনার নাম জনাব মনসুর ছাহেব; তিনি তখন সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন) উনার সঙ্গে ছিলেন। জনাব মুজিবুর রহমান ছাহেব (যিনি হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ছিলেন এবং পরে যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন)-উনার বর্ণনা অনুযায়ী মনসুর ছাহেব এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছিলেন।

পবিত্র খানকা শরীফ স্থানান্তর

১৯৭৬ ঈসায়ী সনের অক্টোবর মাসে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি গেন্ডারিয়া লোহার পুল মসজিদ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যাত্রাবাড়ীতে একটি নুতন বাড়ীতে খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বাড়ীর জায়গা ছিল যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে একটু পশ্চিমে মেইন রোডের পাশে। ইহা প্রথমে একটি ডোবা (পানিপূর্ণ নীচূ জায়গা) ছিল, যার মালিক ছিলেন পার্শবর্তী বাড়ীর একজন ডাক্তার। সেই ডাক্তার ছাহেব তিনি মুর্শিদ ক্বিবলার একজন আশিক্ব মুরীদ ছিলেন। তিনি উক্ত জায়গা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে হাদিয়া হিসেবে দেন। হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা তিনি এই জায়গায় মাটি ভরাট করান। অতঃপর সেখানে পাইলিং করে মসজিদ, খানকা শরীফ এবং নিজ পরিবার নিয়ে থাকার জন্যআবাসস্থল নির্মান করেন। দীর্ঘদিন এ নির্মানের কাজ চলেছিল। বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশনের কাজে মুর্শিদ ক্বিবলার অনেক মুরীদ কারিগর ছিলেন। তাছাড়া অন্যান্য অনেক মুরীদান ইচ্ছাকৃতভাবে ছওয়াব লাভের আশায় এ কাজে কায়িক শ্রম দিতেন। যাত্রাবাড়ীতে উনার হুযরা শরীফ মসজিদের দক্ষিন পার্শে মসজিদের এইরূপ সংলগ্ন করে নির্মান করা হয়েছিল যে, হুযরা শরীফ থেকে মসজিদে শুধু এক কদমে প্রবেশ করা যেত এবং হুযরা শরীফ উনার দরজা জানালা খুললে মসজিদের মুছল্লী দেখা যেত। হুযরা শরীফ উনার দক্ষিণ পাশের্Ÿ একই কমপাউন্ডের মধ্যে পারিবারিক আবাসস্থল তৈরী করা হয়। কমপাউন্ডের মধ্যে মসজিদের সম্মুখে একটি বড় পানির হাউজ করা হয়, যেথানে ওযূ করা হত। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বর্ণনা অনুযায়ী, উনার হুযরা শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজ্রা শরীফ এবং মসজিদে নববী শরীফ উনার অবস্থানের সুন্নত পালনার্থে ঐরূপ করে নির্মান করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! হুজ্রা শরীফে একটি চৌকি একটি টেবিল ছিল। সম্মুখে খোলা জায়গা ছিল, যেখানে ২০/২৫ জন লোক বসা যেত। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি চৌকির উপর বসতেন, অথবা উত্তর-দক্ষিনে লম্বমান চৌকিতে কেবলামুখী হয়ে শুতেন। তখন কোন কোন মুরীদান উনার পা মুবারক ও শরীর মুবারক দাবাতেন। কোন লোক বাইয়াত হতে চাইলে এখানেই বাইয়াত করা হত। যাত্রাবাড়ীতে আসার পর মুর্শিদ ক্বিবলা মাদ্রাসা আলীয়ার শিক্ষকতার চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এই হুযরা শরীফে বসেই তিনি তা’লীম তালকীন দিতেন, ওয়াজ নছীহত করতেন, মুরীদগণের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। সাপ্তাহিক যিকির আযকার মসজিদে অনুষ্ঠিত হত।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন: মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে বিভিন্ন হালে থাকেন। কোন কোন সময় ফয়েজ, যজ্বা ও হালের চাপ শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাবের কারণে শরীর ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। তখন অন্য কেউ শরীর দাবালে ইহা প্রকৃতিস্থ হয়। আবার এর মাধ্যমে মুরীদরা মুর্শিদের ফয়েজ তাওয়াজ্জুহও পেয়ে থাকে। কাজেই সাধারণ লোকের চোখে দৃষ্টিকটু হলেও এতে ফায়দা রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

ওয়াজ নছীহত

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বিভিন্ন সময় অনেক সূক্ষ¥ বিষয়ে আলোচনা করতেন। যেমন একবার তিনি উল্লেখ করেন: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই মর্মে ইরশাদ মুবারক করেন: “তিনটি জিনিষ আমার নিকট প্রিয় করা হয়েছে- স্ত্রীলোক, সুগন্ধী এবং নামাযের মধ্যে চোখের শীতলতা।” সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা এভাবে করেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে পবিত্র ওহী মুবারক আসার কারণে শারীরিক বিশেষ শান মুবারক জাহির হতেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, শীতের দিনে পবিত্র ওহী আসতে থাকলে উনার নূরুত ত্বীব (ঘাম) মুবারক নির্গত হতো, কোন বাহনে থাকা অবস্থায় ওহী নাযিল হতে থাকলে বাহন বসে যেত, এ অবস্থায় কোন লোকের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাঁটু লাগা থাকলে পবিত্র ওহী উনার প্রভাব সে লোকের শরীরেও প্রচন্ডভাবে অনুভূত হতো। এই অবস্থায় যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সঙ্গে সাক্ষাত মুবারক করতেন এবং আরাম বোধ করতেন। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অনুযায়ী ‘নামায মু’মিনের মি’রাজ শরীফ। পবিত্র মিরাজ শরীফে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক লাভ করেছেন। চোখ দিয়ে দেখা হয়। সুগন্ধীর দ্বারা আধ্যাত্মিক আকর্ষন বাড়ে। কাজেই সুগন্ধি মেখে তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন মি’রাজ শরীফ উনার শান মুবারক জাহির হতেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক উনার কারণে উনার চক্ষু মুবারক শীতল হতো অর্থাৎ তিনি আরাম বোধ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অন্য এক সময় বলেন: কারো কারো মতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নবুয়তের পূর্বে সত্য স্বপ্নের ধারাবাহিকতা একাধিক্রমে ৬ মাস অবধি হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: সত্য স্বপ্ন নুবুয়তের ছিচল্লিশ অংশের এক অংশ (বুখারী শরীফ)। কোন কোন আলিম উনার ব্যাখ্যায় বলেন: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুয়তের সময়কাল ছিল ২৩ বৎসর। উনার নুবুয়ত-পূর্ব সত্য স্বপ্নের ধারাবাহিকতা ছিল ৬ মাস। স্ইে হিসাবে সত্য স্বপ্ন নুবুয়তের ছিচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যাত্রাবাড়ী খানকা শরীফ মসজিদে প্রতি জুমুয়া বারে জুমুয়া উনার নামাযের খুতবা মুবারক দেওয়ার পুর্বে বসে খুতবা উনার বিষয় বস্তুর উপরে আলোচন মুবারক করতেন।
তাছাড়া সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার খানকা শরীফে মুরীদগণ সমবেত হলে বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াজ নছীহত, আলাপ আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় রাজনৈতিক বিষয়েও আলোচনা করতেন। রাজনৈতিক বিষয়সমূহেও উনার গভীর জ্ঞান ছিল।
সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন: কেবল চালাক চতুর হলেই টাকা পয়সা, রিযিক দওলত হাছিল করা যায় না, ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার দান। এ ব্যাপারে তিনি একটি লোকের উদাহরণ দিতেন। লোহার পুলের নিকটে কোন এক ধনী লোক এতই অশিক্ষিত এবং কম জ্ঞানের লোক ছিল যে, বাতাসকে বাসাত বলত। আর নিজের টাকা পয়সার গণনা সঠিক ভাবে জানত না। কিন্তু সে অগণিত টাকা পয়সার মালিক হয়েছিল। তার কর্মচারিরাই টাকা পয়সার হিসাব কিতাব করত। তাই তিনি বলতেন “আল্লাহ জিছকো চাহতা হ্যায়, ছপ্পর ফাড়কে দেতা হ্যায়”। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান, তাকে ছপ্পর ফেড়ে হলেও দেন। সুবহানাল্লাহ!

অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যাত্রাবাড়ীতে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার পাগলা বাজারের সন্নিকটে একটি বিরাট মহল্লা তিনিই নামকরণ করেছেন “শাহী মহল্লা” হিসেবে। সেখানে তিনি সাধারণ কবরস্তান, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে মসজিদ সংলগ্ন উনার পারিবারিক কবরস্তান রয়েছে। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মাযার শরীফও এই পারিবারিক কবরস্তানেই রয়েছেন। এই মহল্লায় সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনেক মুরীদ বাড়ী ঘর করে বসবাস করছেন। তম্মধ্যে হযরত ন’হুযূর ক্বিবলা উনার এক মাহবুব মুরীদ, অশিতিপর, প্রবীন বৃদ্ধ সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অতিশয় মুহব্বতের লোক, জনাব মুজিবুর রহমান ছাহেব, তদানিন্তন সহকারী খাদ্য পরিচালক, এখানে বাড়ী করে সপরিবারে বসবাস করতেন (কয়েক বছর পূর্বে তিনি ইনতিকাল করেছেন)।

রিয়াজত-মাশাক্কাত

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুরীদগণকে সব সময় রিয়াজত মাশাক্কাতের জন্য উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন: আগের যামানায় বড় বড় ওলী আউলিয়া হয়েছেন, এখন আর হতে পারবে না, এটা কোন কথা নয়। যে চেষ্টা করবে সেই লাভ করবে। হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এই সমস্ত মহান বুযুর্গগণ অপেক্ষা বড় ওলীআল্লাহ আর কেউ হতে পারবেন না, এই ধরণের কথা কোথাও লেখা নেই। তিনি মনে করতেন চেষ্টা তদবীর ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ রহমত হলে উনাদের অপেক্ষাও বড় ওলীআল্লাহ হওয়া সম্ভব। সুবহানাল্লাহ!
তিনি সব সময় মুরীদগণকে উচ্চ সাহস দিতেন। তিনি বলতেন: ইমামতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত। সুতরাং নামাযের ইমামতি করতে ভয় করতে নেই। তিনি বলতেন: আমাদের সিলসিলা হক সিলসিলা। আমার পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা (ন’হুযূর ক্বিবলা) তিনি সুলতানুল আরেফীন। কাজেই যাঁরা উনার খাদিম এবং কায়িম মুকাম উনাদের শানও অতি উর্দ্ধে। সুবহানাল্লাহ!

দ্বীনী কাজে ব্যস্ততা

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত কর্মব্যস্ত জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি যখন মাদ্রাসা আলীয়ায় শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত ছিলেন, তখন একদিকে মাদ্রাসা আলীয়ার দায়িত্ব, অপরদিকে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব, আবার মুরীদ মুতাকিদদের তা‘লীম তালকীন, যিকির আযকার, বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ নছীহত, লোকের বিভিন্ন তদবিরে, যেমন, তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক, বাইয়াত করা, ইত্যাদির জন্য প্রতি দিন শত শত লোকের সঙ্গে সাক্ষাত উনার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন ছিল। তিনি বলতেন: আমি মাদ্রাসায় যাওয়ার সময শুধু ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া পছন্দ করতাম, কেননা ডাল দিয়ে ভাত খেতে খুব কম সময় লাগে। কারণ কর্মব্যস্ততা এত বেশী ছিল যে, পাঁচ মিনিট সময় বেশী ব্যয় করার অবকাশ ছিল না। তবে যাত্রাবাড়ী খানকা শরীফে আসার পর থেকে এই কর্মব্যস্ততা কিছুটা লাঘব হয়। কেননা শিক্ষকতার কাজ থেকে তিনি তখন অবসর গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অল্পদিন পরেই তিনি ডায়বেটিস রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার শেষ বয়সে পড়ে গিয়ে উনার মাথা মুবারক ফেটে যায়। আবার অপর এক সময় সিটে বসার সময় পড়ে গিয়ে পা মুবারক ভেঙ্গে যায়। ক্রমে উনার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায় এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন তিনি নীচে বসে নামায পড়তে পারতেন না। এ সময় মসজিদে ইমাম রাখা হয়েছিল এবং সাপ্তাহিক যিকির উনার খলীফা উনারাই পরিচালনা করতেন।

পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ১৪১৫ সনে, ১২ই জিলকদ শরীফ, ইয়াওমুল খামীস রোজ বৃহি®পতিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে (১৩ই এপ্রিল, ১৯৯৫ ঈসায়ী, ৩০শে চৈত্র, ১৪০১ বাংলা) ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের
পূর্বের ও পরের কিছু ঘটনা:

পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বের দিন (ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার দিবাগত) রাত্রে মুর্শিদ ক্বিবলা হুযরা শরীফের দক্ষিন দিকের কক্ষে শায়িত ছিলেন। সচরাচর এখানেই তিনি রাত্রে থাকতেন। তিনি দেয়ালের দিকে ফিরে শুয়েছিলেন। রাত্র ৯ টায় উনার বড় ছাহেবযাদা মুহম্মদ রিদওয়ান ছাহেব উনার নিকটে গেলে তিনি হঠাৎ দেয়ালের দিক থেকে এ পাশে ফিরে বললেন: রিদওয়ান! আগামী কাল আমার জানাযা পড়ার জন্য লোকজনকে সংবাদ দিয়ে আয়। রিদওয়ান ভাই ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসেন। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন, আব্বাজান কেন এরূপ কথা বলছেন! আধা ঘন্টা পরে তিনি পূণরায় উনাকে দেখতে গেলেন। হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা তিনি তখনও দেয়ালের দিকে ফিরে শুয়েছিলেন। রিদওয়ান ভাই আবার উনার নিকটে গেলেন, সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে দেখেননি, কিন্তু হঠাৎ এ পাশে ফিরে আবার বললেন: কি রিদওয়ান! কালকে আমার জানাযায় আসার জন্য লোকজনকে খবর দিয়ে এসেছিস? এবারও রিদওয়ান ভাই অপ্রস্তুত হয়ে কিছু না বলে সেখান থেকে সরে আসলেন। রিদওয়ান ভাই আধ ঘন্টা পরে আবার উনার আব্বাজান ক্বিবলাকে দেখতে গেলেন। এবারও তিনি দেয়ালের দিকে ফিরে শুয়েছিলেন। কিন্তু রিদওয়ান ভাই সেখানে উপস্থিত হওয়া মাত্র তিনি এ পাশে ফিরে গেলেন এবং রাগ করে ভৎস্যনার স্বরে বললেন: কি, তোকে আমি বার বার বলছি লোকজনকে খবর দেয়ার জন্য, তুই এখনও খবর দিস নি? এতক্ষণ উনার কোন অসুস্থতার লক্ষণই প্রকাশ পায় নি। রাত্র ১১টার সময় হঠাৎ উনার জিসিম মুবারকের বাম দিকে ব্যথা শুরু হলো। রাত্র ১২টায় ডাক্তার আসল। ডাক্তার উনাকে দেখে বললেন: উনার হার্টের সমস্যা হয়েছে। উনাকে অনতিবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। অতঃপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এম্বুলেন্স আসল। তখন তিনি পূর্ণ হুঁশের অবস্থায় ছিলেন। তিনি ওজু করে প্রস্তুত হলেন এবং রাত্র ১ টায় উনাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ইমার্জেন্সি ইউনিটে অক্সিজেন ইত্যাদি দিয়ে রাখা হলো। তখনও উনার হুঁশ ছিল। ডাক্তার উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনার এখন কেমন লাগছে? তিনি বললেন: কোন অসুবিধা নেই। আমি ভাল আছি।
সকাল বেলা উনাকে দেখার জন্য লোকজনের সমাগম হলো। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে উনার শ্রাস-প্রশাস বেড়ে গেল। কিন্তু তখনও তিনি জ্ঞান হারাননি। বেলা ১০ টা ৪৫ মিনিটে তিনি উত্তর দিকে মাথা রেখে নিজে নিজে ক্বিবলামুখী হয়ে শুলেন। উনার সম্মুখে উনার ভায়রা ইঞ্জিনিয়ার গোলাম রসুল ছাহেব উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি শব্দ করে “আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ” উচ্চারণ করলেন। আর সে সময় উনার প্রাণ-বায়ু বের হয়ে গেল। ইঞ্জিনিয়ার ছাহেব সে সময় এই পবিত্র আয়াত শরীফ পড়ছিলেন:
يَا اَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِىْ اِلَى رَبِّكِ الرَّاضِيَةً مَّرْضِيَّةً ، فَادْخُلِىْ فِىْ عِبَادِىْ وَ ادْخُلِىْ جَنَّتِىْ –
(অর্থ: হে প্রশান্ত আত্মা ! তোমার প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে যাও, আর আমার বান্দাদের (দলে) দাখিল হও এবং আমার বেহেশ্তে প্রবেশ কর।)
اِنَّا لِلَّهِ وَ اِنَّ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
(আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং উনারই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন)।
সেদিনই উনার পবিত্র জানাযা নামায অনুষ্ঠানের পর উনাকে শাহী মহল্লায় মসজিদ সংলগ্ন নির্দিষ্ট স্থানে দাফন মুবারক করা হয়।

তিন মাস পরেও পবিত্র
জিসিম মুবারক অক্ষত

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তিন মাস পরে উনার পবিত্র মাযার শরীফের অভ্যন্তরে পানি উঠে যায়। উনার মুরীদগণের মধ্যে কেউ কেউ স্বপ্নে দেখেন, তিনি উনার জিসিম মুবারককে আরো উঁচূ করে কবরস্থ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। অনেক বাদ-প্রতিবাদের পরে উনার পবিত্র মাযার শরীফ উম্মুক্ত করা হয়। দেখা গেল উনার কাফন মুবারক সহ জিসিম মুবারক অবিকৃত আছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মাথা মুবারকের দিক থেকে এক অপূর্ব আতরের সুঘ্রাণ আসতে থাকে। সুবহানাল্লাহ! উনার এক আশিক্ব মুরীদ উনার হাঁটুর নিচের কাফনের কিয়দাংশ উম্মোচন করেন। দেখা গেল উনার জিসিম মুবারক হলুদ বর্ণ তৈলাক্ত অবস্থায় অবিকৃত আছেন, যা চিকচিক করছিলেন। তিন মাস পরেও এর কোন বিকৃতি ঘটেনি। অতঃপর পবিত্র মাযার শরীফকে আর একটু উঁচূ করে উনার জিসিম মুবারক রাখা হয়। উনার মাযার শরীফ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে পাগলা বাজার এলাকায় শাহী মহল্লায় অবস্থিত। নিকটে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও একটি সাধারণ লোকদের কবরস্থান রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত পরিবার পরিজন:

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দুই সংসার ছিলেন। ঢাকা যাত্রাবাড়ী খানকা শরীফ সংলগ্ন আবাসস্থলে উনার বড় আহলিয়া (বড় আম্মাজান) উনার সন্তান সন্ততি নিয়ে বাস করতেন। এ সংসারে উনার ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে। এক মেয়ে, যিনি মাওলানা হোসাইন ছাহেবের আহলিয়া ছিলেন, তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। এ সংসারের বড় ছাহেবজাদা জনাব মুহম্মদ রিদওয়ান ছাহেব বর্তমানে গদীনশীন। সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দ্বিতীয় আহলিয়া (ছোট আম্মাজান) হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা উনার গ্রামের বাড়ীতে নানুপুর, চাঁদপুরে বসবাস করতেন। এ সংসারে উনার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।
প্রতি মাসে এক সপ্তাহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি দেশের বাড়ীতে থাকতেন। সেখানেও খানকা শরীফ ও মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদি ছিলেন। মাসের অবশিষ্ট দিন ঢাকায় যাত্রাবাড়ী খানকা শরীফের বাড়ীতে তিনি অবস্থান করতেন।
সাধারণ লোক দ্বিতীয় বিবাহ করলে দ্বিতীয় আহলিয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এই দিক দিয়ে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি ছিলেন স¤পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি বড় আম্মাজান ও উনার সন্তান সন্ততিগণসহ ঢাকায় থাকতেন। আর ছোট আম্মাজানকে উনার সন্তান সন্ততিসহ দেশের বাড়ীতে রাখতেন।

সম্মানিত খুলাফা ও মুরীদান:

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনেক মুরীদ মুতাকিদ রয়েছেন এবং অনেক খলীফা এখনও বর্তমান আছেন। তবে উনার খাছ ও প্রধান খলীফা হচ্ছেন রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, ইমামে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, জাব্বারিউল আউয়াল, ক্বাবিউল আউয়াল, আস-সাফফাহ, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, হযরত ইমামুল উমাম আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উনার মুবারক উসীলাতেই সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সিলসিলা ও শান মান এখনও যমীনে টিকে আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ইনশাআল্লাহ।

সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যত খলীফা ও মুরীদ রয়েছেন, তাদের মধ্যে উনার সাথে সবচেয়ে বেশী গভীর সুসম্পর্ক ছিল রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথেই। আর বর্তমানেও উনার সাথে রয়েছে পরিপূর্ণ রূহানী নিসবত বা সম্পর্ক। যা কেবল তাছাওউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত লোকদের পক্ষেই বুঝা ও অনুধাবন করা সম্ভব।
স্মর্তব্য যে, সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কতখানী গভীর সুসম্পর্ক ছিল তার কিছু বাস্তব প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
“রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মূলতঃ মাদারজাদ ওলী। তাই শুরু থেকেই উনার অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছে। শিশু অবস্থা থেকেই তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ঘোষিত ছাদিক্বীন। মূলতঃ শরীয়তের একটি উসূল হলো-
النبى نبيا ولو كان صبيا الولى وليا ولوكان صبيا
অর্থ: যিনি নবী তিনি শিশু অবস্থায়ও নবী, যিনি ওলীআল্লাহ তিনি শিশু অবস্থা থেকেই ওলীআল্লাহ। (শরহে আকাঈদুন্ নাসাফী, আল বাইয়্যিনাত শরীফ)
ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও ওলীয়ে মাদারজাদ হিসাবেই যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। শিশু অবস্থা থেকেই অসংখ্য আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের সাথে উনার রূহানী তায়াল্লুক বা সাক্ষাৎ হতো। সুবহানাল্লাহ!
একদা আফযালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, ইমামুল আইম্মা, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সাথে রূহানীভাবে বিশেষ সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি মুজাদ্দিদ হবেন?
ওলীয়ে মাদারজাদ রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বিনয়ের সাথে জবাব দেন, আমার ইলম-কালাম কিছুই নেই। আমি কি করে মুজাদ্দিদ হব! তখন আফযালুল আউলিয়া, ক্বাইয়্যুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সমস্ত কিছুই দান করা হবে।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর বাইয়াত হওয়ার ফরয আদায়ের লক্ষ্যে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হন। মাত্র প্রায় এক বছরে তিনি চার তরীক্বায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার চূড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করে খিলাফত মুবারক লাভ করেন। এরপরেও তিনি দীর্ঘদিন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দরবার শরীফে যাতায়াত করেন। সুবহানাল্লাহ!
ব্যক্তিগত যোগ্যতা, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের আদব-কায়দা, খাছ ইলমে লাদুন্নী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের হুবহু অনুসরণ ও দায়িমী তায়াল্লুক তথা অতুলনীয় ইলম, আমল ও ইখলাছে সন্তুষ্ট হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানে উনাকে নাম ধরে না ডেকে ‘শাহ ছাহিব’ বলে সম্বোধন করতেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনকি সুলত্বানুল আরিফীন যাত্রাবাড়ীর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সন্তুষ্ট হয়ে একথাও বলেছিলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি আমার জন্য উল্লেখযোগ্য কি করেছেন? আমি বলবো, হে মহান আল্লাহ পাক! যামানার মুজাদ্দিদ ও লক্ষ্যস্থল আপনার খাছ ওলী রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে রেখে এসেছি।” সুবহানাল্লাহ!
জীবনের শেষ দিকে তিনি প্রায়ই রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রশংসা করতেন। একদা তিনি প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, “আমার শাহ ছাহেব হচ্ছেন রসূলে নোমা, তিনি যে কোন সময় যে কোন লোককে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার ঘটিয়ে দিতে পারেন।” সুবহানাল্লাহ!
তিনি প্রায়শঃই স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদদের লক্ষ্য করে বলতেন, “সাবধান! তোমরা কেউ কখনো আমার শাহ ছাহেব উনার সাথে বেয়াদবি করবেনা। যে ব্যক্তি উনার সাথে বেয়াদবি করবে সে অবশ্যই হালাক হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ অসংখ্য অগণিত প্রশংসা তিনি নিজ যবান মুবারকে করেছেন, সেসবের অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী আজও বিদ্যমান রয়েছেন। যে কারণে যাত্রাবাড়ীর অনেক মুরীদ বর্তমানে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে পুনরায় বাইয়াত গ্রহণ করেছেন ও করছেন। সুবহানাল্লাহ!

সুমহান বরকতপূর্ণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১১ই রবীউছ ছানী শরীফ

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাস অত্যন্ত বরকত ও ফযীলতপূর্ণ মাস। এই সম্মানিত মাস উনারই পবিত্র ১১ শরীফ তারিখে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যা সারা বিশ্বে পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াযদাহম হিসেবে মশহুর। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত আমরা যে ওয়াক্বিয়া বা ইতিহাস দেখতে পাই, তার মধ্যে শত-সহস্র নছীহত মুবারক বা ইবরত মুবারক রয়ে গেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, উনাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো চিন্তা-পেরেশানীও নেই। ” সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াযদাহম শরীফ উনার গুরুত্ব-তাৎপর্য এবং এ দিবস মুবারকে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনাকালে তিনি এসব মুবারক ক্বওল শরীফ পেশ করেন।

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “প্রত্যেক হিজরী শতাব্দীর শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই উম্মতের ইছলাহর জন্য এমন একজন মহান ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার তাজদীদ করবেন। ” অর্থাৎ বিদয়াত, বেশরা এবং মহাপবিত্র ইসলামী শরীয়ত গর্হিত কাজগুলোর সংশোধন করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সেই রকম একজন খাছ ও বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ হলেন- গাউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ৪৭১ হিজরী সনে পহেলা রমাদ্বান শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) পবিত্র জিলান নগরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। জিলান নগরী তৎকালে ইরানে অবস্থিত ছিলো। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর অর্থাৎ আল হাসানী এবং সম্মানিত মাতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর অর্থাৎ আল হুসাইনী বা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, গাউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত সাইয়্যিদ আবূ ছালেহ মূসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি। যেহেতু তিনি জিহাদপ্রিয় ছিলেন, সেহেতু উনাকে ‘জঙ্গী দোস্ত’ বলা হয়। আর উনার সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক হযরত সাইয়্যিদা উম্মুল খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা।

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ‘বাহজাতুল আসরার’ নামক কিতাব মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গাউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬১ হিজরী সনের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে মারীদ্বী শান প্রকাশ করেন। এভাবে ৫৬১ হিজরী সনের পবিত্র ১১ রবীউছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) গাউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহান দরবার শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। আর এ বরকতময় দিনটিই সারাবিশ্বে ‘পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াযদাহম শরীফ’ নামে মশহুর। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তাই প্রত্যেকের উচিত- এই ঐতিহাসিক ও বরকতপূর্ণ দিবসটি অত্যন্ত জওক-শওক্ব ও মুহব্বতের সাথে পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দোয়া-মুনাজাত শরীফসহ উনার বরকতময় পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক আলোচনা করে অতিবাহিত করা। আর সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনসহ মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে উনার মহাপবিত্র জীবনী মুবারক অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা।

-০-

Details

Details

👑কুরআনে বর্ণিত বরকতময় সুন্নতী ফল জয়তুন ফল

💖সুন্নতী খাবার জয়তুন (الزَّيْتُونِ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি জয়তুন বিষয়ে সরাসরি শপথ করে ইরশাদ মুবারক করেছেন- “শপথ ত্বীন এবং যয়তুনের।” (পবিত্র সূরা ত্বীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

💖নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “এটি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি, বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং পেটের জন্য তেমন শীতল যেমন আগুনের সামনে বরফ।”

💖পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-“সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মুবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩১৯)

১. চোখের কালোদাগ দূর করে
২. রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
৪. তক্বে বয়সের ভাজ পড়া থেকে রক্ষা করে
৫. চুল পড়া রোধ করে
৬.খুশকির জন্য প্রতিশেধক
৭. হৃদরোগের প্রতিশেধক
৮. ত্বক ফাটা রোধ করে
৯. তক্বের রুক্ষতা দূর করে, উজ্জলতা বাড়ায়
১০. ডায়াবেটিক প্রতিরোধ করে
১১. ওজন কমায়
১২. কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে

🌟উন্নতমানের এবং সতেজ জয়তুন ফল পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️+8801782 255 244
ফেইসবুকে পেইজে অর্ডার করতে ইনবক্সে টেক্সট করুন।
অথবা
🌐 সরাসরি অর্ডার করতে ভিজিট করুন: https://sunnat.info/sunnati-foods/sunnati-olive-fruit

olive #oliveoil #fruits #fruit #olivefruits #organic #organicfruit #sunnati #RasoolAllah See less

📣খাটিঁ কালোজিরার তেল📣

“মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শেফা”
🔖সুন্নতী খাবার কালোজিরা তেল ব্যবহারের উপকারিতা:
১. স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে: সুন্নতী কালোজিরা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
২. চুল পড়া রোধে: সুন্নতী কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩. ব্যথা কমাতে: যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে সুন্নতী কালোজিরার জুড়ি নেই।
৪. ফোঁড়া সারাতে: ব্যথাযুক্ত ফোঁড়া সারাতে সুন্নতী কালোজিরা সাহায্য করে।
৫. মাথা ব্যথায়: কপালের দুই পাশ এবং কানে পাশে দিনে তিন-চারবার সুন্নতী কালোজিরার তেল মালিশ করুন মাথাব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সুন্নতী কালোজিরার তেল ব্যবহার করুন।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: সকালে খালিপেটে ১২/১৩ ফোঁটা সুন্নতী কালোজিরার তেল ও ১৫/১৬ ফোঁটা মধু খেলে ডায়াবেটিসের উপকার হয়।
৮. বাতের ব্যথায়: ১০/১২ ফোঁটা সুন্নতী কালোজিরার তেল গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে বাত রোগের উপকার হয় ।
🔖নিরাপদ এবং নির্ভেজাল সুন্নতী খাবার কালোজিরা তেল পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️+8801782 255 244
ফেইসবুকে পেইজে অর্ডার করতে ইনবক্সে টেক্সট করুন।
অথবা ওয়েব সাইটে অর্ডার করতে-
🌐 ভিজিট করুন:https://sunnat.info/…/search&search=%E0%A6%95%E0%A6%BE…

oil #oilgas #oilpaint #oilandgas #oilpainting #oiloncanvas #oilpaintings #blackseed #blackseedoil #blackseedoilbenefits See less

📣ত্বকের যত্নে শামউন নাহল এর উপকারবিধি

১। ত্বকের যত্নে ব্যবহার করুন এন্টি এজিং ক্রিম “” শাম’উন নাহল “”
২. সকল প্রকার ত্বকে ব্যবহারোপযোগী
৩. তৈলাক্ত ত্বকে ভাব দূর করে
৪. রুক্ষ শুষ্ক ত্বকে কোমলতা নিয়ে আসে
৫. ত্বককে করে তোলে মসৃণ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত
৬. প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে
৭. ত্বকে বয়সের ভাঁজ পড়া থেকে রক্ষা করে
৮. ঠোঁট ও ত্বক ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে
৯. ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করে
১০. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
১১. ত্বকের ফাঙ্গাসজাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে
১২. ত্বকের কোষকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ত্বক সুস্থ্য ও সুন্দর করে
১৩. চখের নিচের কালো দাগ দূর করে
১৪. মৌমাছির শরীর নিঃসৃত মোমে ভিটামিন এ থাকায় সেটি ফাটলের স্থানে কোলাজেন
উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ফাটলকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে হ্রাস করে।”
✅ত্বকের যত্নে সুন্নতী প্রসাধনী শাম’উন নাহল পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️+8801782 255 244
ফেসবুকে পেজে অর্ডার করতে ইনবক্সে টেক্সট করুন।
অথবা
🌐 আজই কিনুন : https://sunnat.info/shamun-nahal

antiaging #skin #skincare #skincareph #buityproduct #nahol See less

👑 কাঠের তৈরীকৃত খাছ সুন্নতী চৌকি 👑

🌙 এই এক অনন্য বরকতময় সুন্নত, শয়নে স্বপ্নে মুবারক নিসবত।
🟢 সবার ঘরেই হরেক রকম খাট, চৌকি বা শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কিভাবে শোয়ার ব্যবস্থা করলে তা সুন্নত হবে আমরা কি কখনো ফিকির করেছি❓
🌱 নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত দাবীকারী হিসেবে সর্ববস্থায় উনার মুবারক নিসবত বা সম্পর্ক, তাশাব্বুহ বা মিল রাখার কোশেশে থাকা ঈমানী দায়িত্ব।
🌱 হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১ বিঘা উঁচু চৌকিতে বিশ্রাম মুবারক গ্রহন করেছেন।
কেউ যদি এই মুবারক সুন্নত পালন করে তাহলে তার শোয়া অবস্থায়, ঘুম অবস্থায়, স্বপ্ন দেখা অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিল থাকলো। সুবহানাল্লাহ।
🌱 সারাবিশ্বে একমাত্র খাছ সুন্নতী চৌকির প্রাপ্তি স্থান হচ্ছে: আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️+8801782 255 244
ফেইসবুক পেইজে অর্ডার করতে ইনবক্সে ম্যাসেজ করুন।
অথবা
🌐ভিজিট করুন: https://sunnat.info/sunnati-wooden-chouki?search=%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%9A%E0%A7%8C%E0%A6%95%E0%A6%BF

furniture #furniture #furnitureflip #furniturestore #furnitureartist #furnituremaker #wood #Woodland #woodentoys See less

🔵 এক বিলুপ্ত প্রাপ্ত সুন্নত মুবারক হচ্ছে চামড়ার বালিশ সুবহানাল্লাহ!

⭐ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খয়েরী রং-এর চামড়ার বালিশ মুবারক ব্যবহার করতেন। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ, খয়েরীর রং-এর চামড়ার বালিশ ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

⭐ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার মহাসম্মানিত হাবীব এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ)

⭐ মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, যদি তারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করতে চায়। তাহলে, তারা যেনো আপনাকে অনুসরণ করে, তাহলে আমি মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং তাদেরকে মুহব্বত করবো, তাদেরকে ক্ষমা করবো এবং তাদের প্রতি দয়ালু হবো; নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুবহানাল্লাহ! (সুরা আল ইমরান/১৩১)

⭐ পবিত্র সুন্নত মুবারকের ফযীলত সম্পর্কে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নত মুবারক মুহব্বত করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলো। আর যে আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)

💎 কাজেই, পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত মুবারক স্থাপন করার লক্ষেই আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে গরু এবং খাসীর চামড়ার তৈরীকৃত খাছ সুন্নতী বালিশ।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️+8801782 255 244
ফেইসবুক পেইজে অর্ডার করতে ইনবক্সে টেক্সট করুন।

অথবা
🌐 ভিজিট করুন: https://sunnat.info/sunnati-leather-pillow

leather #leatherpillow #pillows #sunnati See less

📣সুন্নতী চামড়ার নালাইন (জুতা)📣

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’ফিতা বিশিষ্ট চামড়ার জুতা (স্যান্ডেল বা নালাইন শরীফ) পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামে’উল ওসায়েল, আদাবুন নবী)
অর্থাৎ, উনার জুতা (স্যান্ডেল) মুবারক ছিল দু’ফিতা যুক্ত (ক্রস বেল্ট), যা সম্পূর্ণ (তলা-ও) চামড়ার দ্বারা নির্মিত এবং তা লাল-খয়েরী রংয়ের ছিল।

✅উন্নত মানের চামড়ার খাছ সুন্নতী নালাইন পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে।
অর্ডার করতে কল করুন,
☎️ +8801782 255 244
ফেইসবুক পেইজে অর্ডার করতে ইনবক্সে ম্যাসেজ করুন।

অথবা
🌐ভিজিট করুন:https://sunnat.info/index.php?route=product/search&search=%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8

shoes #shoestore #shoestyle #shoestagram #shoestyle #shoesforwomen #shoeslover See less

✳️

সুন্নতী মেসওয়াক

হযরত আবু উমামা রদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ মুবারক করেনঃ

عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما جاءني جبريل قط إلا أمرني بالسواك حتى لقد خشيت أن أحفي مقدم فمي»

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন, এমনটি কখনো হয়নি যে, হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনি আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মেসওয়াকের আদেশ দেননি।

এতে আমার আশংকা হচ্ছিল যে, (মেসওয়াকের কারণে) আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি।(আল মুযামুল কাবীর লিত তবারানী, হাদীস নং৭৮৪৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২২৬৯)

অন্য হাদিস শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لولا أن أشق على أمتي أو على الناس لأمرتهم بالسواك مع كل صلاة»

আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং৮৮৭, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং২৫২)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فضل الصلاة التي يستاك لها على الصلاة التي لا يستاك لها سبعين ضعفا» تفرد به يحيى بن معاوية بن يحيى الصدفي ويقال إن ابن إسحاق أخذه منه

মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুন বেশী ফযীলত রয়েছে। (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫১৯)

✅মিসওয়াক করার তরতীবঃ

১। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মেসওয়াক করা সুবিধা হয়।

২। মেসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত।

৩। ওযু করার পূর্বে মেসওয়াক করা উত্তম।

৪। মেসওয়াক ধরার পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মেসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মেসওয়াক ধরা। এতে করে মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসওয়াক করা যায়।

৫। মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মেসওয়াক করা। আড়াআড়ি ভাবে না করা।

৬। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ও ঘুমানোর পূর্বে, নামাজের আগে, মজলিসে উপস্থিত হবার পূর্বে, কুরআন ও হাদীস পাঠের পূর্বে, খাওয়ার পর মেসওয়াক করা।

শিশু ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি রোমের বাদশাহ কতৃক প্রেরিত পাদ্রীকে যা জবাব দিলেন!

শিশু ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি রোমের বাদশাহ কতৃক প্রেরিত পাদ্রীকে যা জবাব দিলেন!

রোমের বাদশাহ এক পাদ্রী বা ধর্মযাজককে অনেক টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, আসবাবপত্র, মাল-সামানা দিয়ে বাগদাদ শরীফে পাঠালো। উদ্দেশ্য মুসলমান আলিম-উলামাগণ উনাদের সাথে মুনাযারা বা বাহাছে লিপ্ত হয়ে খ্রীস্ট ধর্মকে বিজিত করা। পাদ্রী বাগদাদ শরীফে পৌছে ঘোষনা দিলো, যে ব্যক্তি আমার চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে আমি তার ধর্ম গ্রহন করবো। আর আমার নিকট রক্ষিত ধনসম্পদগুলো তাকে পুরস্কার স্বরূপ দিয়ে দিবো। তবে যে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না তাকে আমাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। আর আমাদেরকে ট্যাক্স বা জিজিয়া কর দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। তার এই ঘোষণা যেন পুরো বাগদাদ শরীফের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ আকার ধারণ করলো।

সে পাদ্রী একটি প্রশস্ত রাস্তার মাথায় একটি উঁচু মিম্বর বসালো। তার উপর বসে তার বাহাদুরী জাহির করতে লাগলো। আম-খাছ সবধরণের লোকের উপস্থিতি ঘটলো। পাদ্রীদেরও আনাগোনা শুরু হলো। দিনের পর দিন সেই ভীড় বেড়ে যেতে লাগলো। সে তিনদিন ধরে গলা ফাটিয়ে সেই ঘোষণা দিতে লাগলো। প্রতিবাদী কোন লোকের আগমন না দেখে তার বাহাদুরীর পরিধি বেড়ে গেল।

উক্ত মজলিসে ৭/৮ বছরের একজন বালকের উপস্থিতি ঘটলো। যিনি উনার পিতার সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন, এতো লোক একসাথে এখানে জমা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। বালকটি দেখতে পেলেন পাদ্রী তার কুট কৌশলের দাপট বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাহাদুরী দেখাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন সন্তোষজনক জাওয়াব দিচ্ছে না। বালক তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার কাছে পাদ্রীর প্রশ্নের জাওয়াব দেয়ার অনুমতি চাইলেন। বললেন, আব্বাজান! আপনি অনুমতি দিলে পাদ্রীর প্রশ্নের সন্তোষজনক জাওয়াব আমি দিতে পারি।

সেই বালক তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক তখন অল্প। উনার বয়স কেউ কেউ সাত বছরের কথা উল্লেখ করেছেন; অর্থাৎ শিশুকালের ঘটনা।

উনার পিতা বললেন, যেখানে অনেক বড় বড় আলিম-উলামাগণ কোন জাওয়াব দিচ্ছেন না, সেখানে আপনি কি জাওয়াব দিবেন? তিনি অনুমতি দিলেন না। পুনরায় বালক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। পিতা ধমকের সাথে বললেন, আপনি কি প্রলাপ বকছেন? আলিম উলামাদের সামনে আপনার কি বা জাওয়াব দেয়ার প্রমান আছে?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভাবগাম্ভির্যের সাথে মিম্বরের উপর বসলেন। বললেন, বলুন! আপনার সেই প্রশ্নাবলী কি কি?

পাদ্রী বললো, প্রথম প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্বে কি ছিল?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, গণিতের সংখ্যাগুলো আপনার স্মরণ আছে কি? স্মরণ থাকলে কিছু সংখ্যা গণনা করুন।
পাদ্রী বললো, এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, পূনরায় বলুন।
পাদ্রী বললো, এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, একের পূর্বে গণনা করুন।
পাদ্রী বললো, একের পূর্বে কিছু নেই। এক থেকে গণনা শুরু হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, যখন রূপক সংখ্যার মাঝে একের পূর্বে কিছু না থাকে, তবে প্রকৃত একক মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্বে কি কিছু থাকতে পারে?

পাদ্রী নিরুত্তর রইলো। কিছুক্ষণ পরে মাথা নেড়ে বললো, না কিছু থাকতে পারে না। আপনি ঠিকই বলেছেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বলো, আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন কি?

পাদ্রী বলো, ২য় প্রশ্ন বলুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কোথায় আছেন?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনি কি একথা বলতে পারো যে, আপনার শরীরে রূহ কোথায়? রূহ তো আপনার ভিতরে স্বয়ং বিদ্যমান আছে।
পাদ্রী বললো, রূহের নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই। তা শরীরের সর্বত্র বিদ্যমান।
তিনি বললেন, রূহ যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক মাত্র। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
    يسئلونك عن الروح قل الروح من امر ربى.
    অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, রূহ হচ্ছে, আমার মহান রব আল্লাহ পাক উনার আদেশ মাত্র। অর্থাৎ উনার আদেশে সৃষ্টি হয়েছে।”
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, রূহ যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং তা প্রত্যেক প্রাণীর মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। অথচ আপনি তার অবস্থানের কথা বলতে পারছেন না। তাহলে রূহের সৃষ্টিকারী মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দিষ্ট স্থান ও পরিপূর্ণ মর্তবা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন? তিনি তো সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সর্বত্র হাযির-নাযির।

পাদ্রী ইহা শুনে লা-জাওয়াব (নিরুত্তর) রইলো। ক্ষীণ আওয়াজে বললো, নিঃসন্দেহে আপনার কথা যথার্থ ও বাস্তব।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনার তৃতীয় প্রশ্ন কি?

পাদ্রী বললো, ৩য় প্রশ্ন, মহান আল্লাহ পাক উনার চেহারা মুবারক কোন দিকে?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উপস্থিত একজনকে বললেন, একটি মোমবাতি নিয়ে আসুন। মোমবাতি নিয়ে আসা হলো। উনার নির্দেশে তা জ্বালানো হলো। তিনি পাদ্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাতিটির মুখ কোন দিকে, বলুন?
পাদ্রী বললো, বাতিটির মুখ সবদিকে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন দিক নেই। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আয’ম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বাতি একটি ধ্বংসশীল বস্তু। তার মুখ যদি সবদিকেই থাকতে পারে। চারিদিকে আলোকিত করতে পারে। তাহলে ফিকির করুন, মহান আল্লাহ পাক যিনি ওয়াজিবুল ওজুদ এবং আসমান যমীনকে আলোকিতকারী। তাহলে উনার চেহারা মুবারক কেন এবং কিভাবে কোন নির্দিষ্ট দিকে থাকতে পারে?

পাদ্রী হিকমতপূর্ণ জাওয়াব শুনে লা-জাওয়াব- নির্বাক হয়ে গেলো। উপস্থিত সকল লোক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নূরাণী চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, বলো, আপনার চতুর্থ প্রশ্ন কি?

পাদ্রী বললো, ৪র্থ প্রশ্ন বলুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কি করছেন?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এটাই করলেন যে, আপনার মতো বয়সধারী অহঙ্কারী ও পবিত্র তাওরাত শরীফ ও পবিত্র ইঞ্জিল শরীফ-এর অভিজ্ঞ এবং ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসীকে মিম্বর থেকে নীচে নামিয়েছেন। আর আমার মত অল্প বয়সী, একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলমানকে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগত ত্বলিবে ইলিম (ছাত্র) শিশু সন্তানকে মিম্বরের উপর বসিয়ে দিলেন। আপনাকে দিলেন জিল্লত (অপমান) এবং আমাকে দিলেন ইজ্জত (সম্মান)। সুবহানাল্লাহ!

পরে রোমীয় পাদ্রী স্বীয় ওয়াদা ও শর্ত অনুযায়ী পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করলো-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল।”

(ইমামুল মুহাদ্দিসীন-১০৫)

সুবহানাল্লাহ!