রমাদ্বান শরীফ ও যাকাত সম্পর্কিত সুওয়াল-জাওয়াব গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

মুহম্মদ নূরুর রহমান সিয়াম, কুসুমবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল : যে মূল্যে শেয়ার কেনা ছিলো যাকাত দেয়ার সময় মূল্য বৃদ্ধি পেলে বা কমলে কোনো টাকার উপর যাকাত হবে?

জাওয়াব : যে মূল্যে শেয়ার কেনা হয়েছে, যাকাত দেয়ার সময় মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কেনা মূল্যেই যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি শেয়ার বিক্রি করে, তাহলে বিক্রিত মোট মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি শেয়ারের মূল্য কমে যায় তাহলে যাকাত প্রদানের সময়কার মূল্যে যাকাত আদায় করতে হবে।

মুহম্মদ নূরুজ্জামান সাজিদ, চিলমারী কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল : বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কিভাবে যাকাত দিতে হবে?
জাওয়াব : যাকাত দাতার নিকট যে ক্যরেটর স্বর্ণ রয়েছে, সে ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্যে যাকাত আদায় করতে হবে। একাধিক ক্যারেটর স্বর্ণ থাকলে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করতে হবে।

মুহম্মদ পারভেজ, সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়াল : যেদিন যাকাত দিবে অর্থাৎ যেদিন নিছাবের এক বছর পূর্ণ হবে তার একদিন পূর্বে আরও টাকা হাতে আসলে (যদিও নতুন আসা টাকা এক বছর ছিলো না) কিভাবে যাকাত দিতে হবে?
জাওয়াব : নিছাবের মালিক হয়ে এক বছর পূর্ণ হলেই যাকাত দিতে হয়। যখন বা যেদিন যাকাত-এর নিছাবের এক বছর পূর্ণ হবে সেদিন তার নিকট (নিত্যপ্রয়োজনীয় টাকা ব্যতীত) যত টাকা থাকবে অর্থাৎ নিছাবের সাথে যত টাকাই সংযুক্ত হোক না কেন, সমস্ত টাকারই যাকাত আদায় করতে হবে যদিও কতক টাকা যাকাতদাতার হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়নি তা সত্ত্বেও।

মুহম্মদ নীরব, চাঁদপুর।
সুওয়াল : একজনকে টাকা দেয়া হয়েছিলো জমি নেয়ার জন্য, এখন সে ব্যক্তি টাকাও ফেরত দেয় না, জমিও দেয় না, তাহলে কিভাবে যাকাত হবে?
জাওয়াব : বাসস্থানের জন্য অথবা চাষাবাদ করার জন্য যদি জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।
উল্লেখ্য, টাকা গ্রহীতা যদি জমি না দিয়ে টাকা ফেরত দেয়; আর সে টাকা যদি নিছার পরিমাণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয় তাহলে সে টাকারও যাকাত দিতে হবে। আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। জমিদাতা যদি জমি না দিয়ে টাকা আটকে রাখে তবে টাকা দাতা ইচ্ছা করলে তখনও যাকাত আদায় করতে পারে অথবা যখন জমি অথবা টাকা পাওয়া যাবে তখন যত বছর এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে ততো বছরেরই যাকাত অবশ্যই আদায় করতে পারবে।
মুহম্মদ মুক্তাদির, মধুপুর, রাজশাহী।
সুওয়াল : ঔষধ কোম্পানীগুলোর ব্যাঙ্কে টাকা থাকে। আবার মার্কেটে বহু টাকার প্রডাক্ট থাকে। তবে কিভাবে কোম্পানীগুলো যাকাত দিবে? আবার তাদের অনেক টাকা বকেয়া হিসেবে মার্কেটে আছে সেই টাকার উপর কি যাকাত হবে?
জাওয়াব : যে টাকা ব্যাঙ্কে আছে তার যাকাত যেমন আদায় করতে হবে এবং তেমন মার্কেটে যত টাকার প্রডাক্ট আছে তারও যাকাত আদায় করতে হবে। আর যে টাকা বকেয়া হিসেবে দেয়া আছে তা যদি দেনাদাররা স্বীকার করে যে, আদায় করে দিবে তবে তা হস্তগত হওয়ার পূর্বেও আদায় করতে পারবে। অন্যথায় হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করতে পারবে। আর দেনাদার যদি দেনা অস্বীকার করে অথবা টাকা দিতে অস্বীকার করে তবে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।

মুহম্মদ মীলাদ হুসাইন, সিলেট।
সুওয়াল : কেউ বিগত বহু বছর যাকাত আদায় করেনি। কিন্তু সে মালিকে নিছাব ছিলো। তখন স্বর্ণ বা গোল্ড-এর রেটও বিভিন্ন ছিলো। তাহলে কিভাবে যাকাত আদায় করবে?
জাওয়াব : নেছাব সম্পন্ন ব্যক্তিযত বছর যাকাত আদায় করেনি; হিসাব করে তত বছরেরই যাকাত তাকে আদায় করতে হবে। কারণ যাকাত হচ্ছে ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয। বর্তমানে যে সময়ে সে ব্যক্তি যাকাত আদায় করবে সে সময়ের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী বিগত সমস্ত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে।

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সাজিন, যশোর।
সুওয়াল : জীবন বীমার প্রীমিয়ামের উপর (বীমার টাকা+প্রীমিয়ামের টাকা) যাকাত হবে কিনা?
জাওয়াব : হ্যাঁ, বীমার প্রীমিয়ামের উপর যাকাত হবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত কিংবা পোষ্যের নামে বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়ামের যাকাত আদায় করতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়।

মুহম্মদ যুফার, ভোলাহাট।
সুওয়াল : সারা বছর ধরে যাকাত দেয়া যায় কিনা?
জাওয়াব : আরবী বা হিজরী বছরের যে কোনো মাসের যে কোনো দিনে যাকাত আদায় করা যায়। তবে হিসাবের সুবিধার জন্য যাকাতদাতার পক্ষ থেকে আরবী মাসের যে কোনো একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেমন, পহেলা রবীউল আউয়াল শরীফ অথবা পহেলা রমাদ্বান শরীফ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, হিজরী বছর ব্যতীত অন্য কোনো বছর হিসেবেই বছর গণনা করে যাকাত আদায় করলে যাকাত আদায় শুদ্ধ হবে না। যেমন ঈসায়ী সন বা ইংরেজি বছর অথবা ফসলী সন বা কথিত বাংলা সন ইত্যাদি।

মুছাম্মত সাদিয়া আক্তার, সিরাজগঞ্জ।

সুওয়াল: অনেক জায়গায় দেখা যায়, ইফতারী ও সাহরীর সময় সাইরেন বাজিয়ে থাকে? সাইরেন বাজানো কী জায়িয?
জাওয়াব: ইফতারী ও সাহরীর সময় ঘোষণার জন্য সাইরেন বাজানো হারাম। ইফতারীর সময় নির্ধারণের জন্য আযান দেয়াই খাছ সুন্নত। আর সাহরীর জন্য মুখে অথবা মাইকে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে।

মুহম্মদ নূরুয যামান (সাজিদ), কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল: উশর বা ফসল এবং পশুর যাকাতের হুকুম কী?
জাওয়াব: উশর বা ফসল এবং পশুর যাকাতের হুকুম হচ্ছে-
* প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত প্রাপ্ত ফল বা ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য।
* আধুনিক উপায়ে পরিশ্রম করে উৎপাদিত প্রাপ্ত ফল বা ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য।
* সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৩০টি গরু/মহিষ হলে ১ বছর বয়সের ১টি, ৪০টি হলে ২ বছর বয়সের ১টি গরু বা তার সমমূল্য।
* সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৪০টি ভেড়া/ছাগল হলে ১ বছর বয়সের ১টি, ১২১টি হলে ২টি, ২০১টি হলে ৩টি, ৪০০টি হলে ৪টি এরপর প্রতি শতকে একটি ছাগল বা তার সমমূল্য।

Posted on সেপ্টেম্বর 3, 2012, in যাকাতের শরয়ী হুকুম আহকাম. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান